মাতৃভাষা শিক্ষাদানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বিস্তারিত আলোচনা
মাতৃভাষা শিক্ষাদান শুধুমাত্র ভাষা শেখানোর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটি একটি শিশুর জ্ঞান, দক্ষতা এবং মনোভাব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাতৃভাষা শিক্ষাদানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি:
১. ভাষাগত দক্ষতা বিকাশ:
- শ্রবণ, বলা, পড়া এবং লেখার দক্ষতা উন্নত করা:
- শিশুদের গল্প, কবিতা, গান শোনানোর মাধ্যমে শ্রবণ দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- কথোপকথন, বিতর্ক, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে বলা দক্ষতা উন্নত করা।
- পড়ার অভ্যাস তৈরি করে পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- নিয়মিত লেখার মাধ্যমে লেখার দক্ষতা উন্নত করা।
- সঠিক উচ্চারণ, ব্যাকরণ এবং বাক্য গঠন শেখান:
- শিক্ষকদের সঠিক উচ্চারণ এবং ব্যাকরণ ব্যবহার করা।
- ব্যাকরণের নিয়মগুলি সহজবোধ্য করে শেখান।
- বিভিন্ন ধরণের বাক্য গঠন ব্যবহার করে শিশুদের ভাষার সাবলীলতা বৃদ্ধি করা।
- শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করা:
- নতুন শব্দ শেখানোর জন্য ছবি, গল্প এবং খেলা ব্যবহার করা।
- শব্দের অর্থ এবং ব্যবহার বোঝানো।
- নিয়মিত পড়া এবং লেখার মাধ্যমে শব্দভান্ডার বৃদ্ধি করা।
- ভাষা ব্যবহারের সাবলীলতা বৃদ্ধি করা:
- শিশুদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভাষা ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।
- ভুল ত্রুটি সংশোধন করে সঠিকভাবে ভাষা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা।
২. জ্ঞান অর্জন:
- মৌলিক ধারণা বোঝার সুযোগ করে দেওয়া:
- পরিবেশ, বিজ্ঞান, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ের মৌলিক ধারণা মাতৃভাষায় শেখান।
- ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা।
- বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান আহরণের মাধ্যম সরবরাহ করা:
- পাঠ্যবই, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা।
- শিশুদের জ্ঞান প্রয়োগ করার সুযোগ করে দেওয়া।
- সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বিকশিত করা:
- প্রশ্নোত্তর, বিতর্ক এবং অন্যান্য
মাতৃভাষা শিক্ষাদানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো।
(১) বর্ণ সমূহের সার্থক পরিচিতি:-
স্বরবর্ণ ,ব্যঞ্জনবর্ণ ও যুক্ত ব্যঞ্জনগুলি সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঠিক পরিচিতি থাকা আবশ্যিক। প্রতিটি যুক্তবর্ণের গঠন ,উচ্চারণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত থাকা দরকার। শিক্ষক মহাশয় উচ্চারণ গুলির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানাবেন যেমন-
(a) ক্ষ - ক এ ষ অর্থাৎ, ক+ষ= বক্ষ ,যজ্ঞ ইত্যাদি।
(b) বর্গীয়-জ, দন্ত্য-স, মূর্ধন্য-ষ ইত্যাদি।
(২) সঠিক ভাষার ব্যবহার:-
আমরা লেখার সময় যে চলিত ভাষা ব্যবহার করি তার লিখিত রূপে বা মৌলিক রূপে সঠিক হওয়া দরকার। অর্থাৎ, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া, লেখার বা বলার সময় যাতে এই দুটি ভাষা মিশিয়ে না ফেলে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
(৩) আত্মপ্রকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম:-
মাতৃভাষা আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মানুষের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো মাতৃভাষা। শিক্ষার্থীকে মাতৃভাষায় দক্ষ করে তোলায় মাতৃভাষা শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
(৪) মানসিক পরিপুষ্টির সহায়ক:-
শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ মাতৃভাষার মাধ্যমে সবচেয়ে ভালোভাবে সম্ভব। মাতৃভাষায় শিশুর স্বাভাবিক দক্ষতা এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। এর ফলে তার মানসিক বিকাশ সুষ্ঠুভাবে সম্ভব হয়।
(৫) কল্পনা শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন:-
মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্পনা শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ হয়।
(৬) মানসিক, নৈতিক ,বৌদ্ধিক ও আবেগ মূলক সত্তার বিকাশ:-
শিক্ষার্থীদের যাতে মানসিক, নৈতিক ,বৌদ্ধিক ও আবেগ মূলক সত্তার যথাযথ ও পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে তার জন্য মাতৃভাষার যথাযথ অনুশীলন প্রয়োজন।
(৭) মূল্যবোধের বিকাশ সাধন:-
মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে শিশুর মূল্যবোধের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে ।যেমন-যে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় , তার আচরণের পরিবর্তন ঘটে, নিয়মানুযায়ী পঠন-পাঠন করতে শেখে ইত্যাদি।
(৮) পঠন পাঠনের অভ্যাস সৃষ্টি করা:-
স্পষ্ট উচ্চারণে যাতে শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছন্দে পড়ে যেতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। পঠন-পাঠনের অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।
(৯) স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিশীল ধারণার বিকাশ:-
কথাবার্তায় ও চিন্তায় যেন যুক্তিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়-সেদিকে শিক্ষকদের নজর দিতে হবে।
(১০) সামাজিক ও সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশ সাধন:-
মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্নেহ ,মায়া, মমতা, দয়া, সহানুভূতি, সহযোগিতা বোধ গড়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশ সাধন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
(১১) সাহিত্যরসের সার্থক উপলব্ধি:-
মাতৃভাষার মাধ্যমে সাহিত্যের ভাব বোধগম্য করা যায় । অর্থাৎ, সাহিত্যরসের সার্থক উপলব্ধি করতে পারা যায়।